কারিগরি পদে বারবার আমলা নিয়োগ, কাজের গতি কমার শঙ্কা

অর্থনীতি


প্রশাসন থেকে ফের বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়ার পর প্রশ্ন উঠেছে, স্থায়ীভাবে পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যানের পদটি কী আমলাদের দখলেই চলে গেলো? সম্প্রতি প্রশাসন ক্যাডারের আরেক কর্মকর্তা জনেন্দ্র নাথ সরকারকে সরিয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান পদে অতিরিক্ত সচিব রেজানুর রহমানকে বসানো হয়েছে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ভূতাত্ত্বিক ড. হোসেন মনসুরকে সরিয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান পদে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে ইশতিয়াক আহমেদকে বসানো হয়। তখন থেকেই কারিগরি পদে সরকারের আমলা নিয়োগ দেওয়া নিয়ে সমালোচনা ছিল।

সূত্র বলছে, অধ্যাপক মনসুরের সঙ্গে সাবেক সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী বীর বিক্রমের বিরোধের সূত্র ধরে পেট্রোবাংলায় চেয়ারম্যান হিসেবে আমলা নিয়োগ দেওয়া শুরু হয়। ওই সময় সরকারের আরেক প্রভাবশালী সচিব ছিলেন আবুল কালাম আজাদ। পরবর্তী সময়ে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আবুল কালাম আজাদ পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের পদটিতে আমলা বসিয়ে দেন। আমলাতন্ত্রের চালে আর এই খাতের কারিগরি জ্ঞানে অভিজ্ঞরা পেট্রোবাংলায় ফিরতে পারেননি।

ইশতিয়াক আহমেদের পর সরকারের আরেক অতিরিক্ত সচিব আবুল মনসুর মো. ফায়জুল্লাহকে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর এবিএম আব্দুল ফাত্তাহা, নাজমুল হোসেন, জনেন্দ্র নাথ সরকার সবাই প্রশাসন ক্যাডারের অতিরিক্ত সচিব পদের কর্মকর্তা ছিলেন।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এদের মধ্যে বেশিরভাগই সচিব হিসেবে পেট্রোবাংলা ছাড়লেও জনেন্দ্র নাথকে পেট্রোবাংলা থেকে সরিয়ে বাধ্যতামূলক অবসরে দেওয়া হয়।

সাধারণত এ ধরনের কারিগরি পদে সরকার কারিগরিভাবে অভিজ্ঞদের নিয়োগ দেয়। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে (পিডিবি) কর্মরতদের ধীরে ধীরে পদোন্নতি দিয়ে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ করা হয়। অতীতে বাংলাদেশে সামরিক শাসনের সময় সামরিক বাহিনী থেকে কোনও কোনও ব্যক্তিকে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেওয়া হলেও বরাবর এই খাতের অভিজ্ঞদের পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইন অনুযায়ী প্রশাসন ক্যাডারের কাউকে পেট্রোবাংলায় নিয়োগ দেওয়াতে কোন ব্যত্যয় ঘটে না।  কিন্তু একজন অতিরিক্ত সচিব তার সচিব হিসেবে পদোন্নতির আগে এখানে কিছু দিন কাটিয়ে যান। অনেকটা আসা আর যাওয়ার ব্যস্ততায় তাকে পেট্রোবাংলার কোনও কাজ বুঝে ওঠার আগেই বিদায় নিতে হয়।

অধ্যাপক মনসুরের সময় পেট্রোবাংলা যে গতিতে কাজ করছে আমলাদের চেয়ারম্যান পদে বসানোর পর আর তা সম্ভব হয়নি। অনেকেই বলছেন, জ্বালানি ঘাটতির বাংলাদেশে পেট্রোবাংলা পথ হারানোয় আমাদেরকে আমদানিনির্ভর হতে হয়েছে।

আগস্টে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ধারনা করা হয়েছিল– প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কার করে সেখানে প্রকৃত অভিজ্ঞদের দায়িত্ব দেওয়া হবে। কিন্তু সেই পুরোনো ধারায় পথ হাঁটলো পেট্রোবাংলা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উন্নয়নের স্বার্থে পেট্রোবাংলা, বাপেক্স, কিংবা অন্য গ্যাস কোম্পানির মতো বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোতেও প্রফেশনালদের নিয়োগ দেওয়া জরুরি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ম. তামিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এই খাতে আমাদের টেকনিক্যাল লিডারশিপের দরকার আছে। যে এই লিডারশিপ নেবে তাকে তো গ্যাসক্ষেত্রে গ্যাস কীভাবে উত্তোলন করতে হবে, কীভাবে অনুসন্ধান করতে হবে, উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে- এসব বিষয় জানতে হবে। না জানলে কাজের গতি আসবে কীভাবে? অন্যের দ্বারা শিক্ষিত হয়ে এসব কাজ করা তো কঠিন। এজন্য আমি মনে করি, অভিজ্ঞতাসম্পন্ন লোক আসা দরকার। 

বদরুল ইমাম বলেন, পেট্রোবাংলার কার্যক্রম পুরোপুরি প্রশাসনিক না। এটার সঙ্গে জড়িত আছে মাঠভিত্তিক, ভূতাত্ত্বিক নানা কাজ। সুতরাং এর যে চেয়ারম্যান হবেন তার মাঠভিত্তিক এসব কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। অতীতে আমরা দেখেছি, এই পদে নামকরা জিওলজিস্ট ছিলেন, নামকরা পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। তাদের পক্ষে গ্যাস অনুসন্ধানের ধারাটা  বোঝা, কোথায় জোর দেওয়া উচিত ইত্যাদি বিষয় বোঝা সহজ। একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা,  যিনি প্রশাসন থেকে আসছেন তার পক্ষে এসব তেল-গ্যাসের বিষয়গুলো জানতে-বুঝতেই অনেক সময় চলে যায়। ফলে এমন লোক এইখানে বসানো উচিত যিনি বিষয়গুলো আগে থেকেই খুব ভালো বোঝেন, যার ভালো অভিজ্ঞতা আছে৷




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *