সেন্টমার্টিনে ভয়াবহ আগুন পুড়ল ৩ রিসোর্টের ২৬ কক্ষ, তদন্ত কমিটি গঠন

Just Now


দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে আগুনে ৩টি ইকো রিসোর্টের ২৬টি কক্ষ পুড়ে যাওয়ার পর দ্বীপটির অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দ্বীপটিতে বিভিন্ন মানের আড়াই শতাধিক আবাসিক প্রতিষ্ঠান থাকলেও মাত্র কয়েকটি ছাড়া বাকিগুলোয় নেই নিজস্ব কোনো অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। আগুন নিয়ন্ত্রণে নেই কোনো সরকারি ব্যবস্থাও।

মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) রাতে আগুনে পুড়ে দ্বীপের ৩টি ইকো রিসোর্টের ২৬টি কক্ষ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এতে প্রাথমিকভাবে ৬ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এরই মধ্যে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটন ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক জানান, মঙ্গলবার রাত ২টা ১০ মিনিটে সাইরী ইকো রিসোর্টের অভ্যর্থনা কক্ষের মাল্টিপ্লাগে শর্টসার্কিট হয়ে আগুনের সূত্রপাত হয়। তিনি বলেন, অভ্যর্থনা কক্ষের ঠিক পেছনে বিচ ভ্যালি ইকো রিসোর্ট। বাতাস থাকার কারণে মিনিটের মধ্যে বিচ ভ্যালির ছাউনিতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

তিনি আরও জানান, কাঠ আর বাঁশ দিয়ে তৈরি বিচ ভ্যালি ইকো রিসোর্টে আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে কয়েক মিনিটের মধ্যে পুরো রিসোর্টে ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে বিচ ভ্যালিসহ পাশের কিংশুক ইকো রিসোর্ট পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, দ্বীপের স্থানীয়, আগত পর্যটক ও যৌথবাহিনীর আড়াই ঘণ্টার চেষ্টায় রাত প্রায় সাড়ে ৪টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

কক্সবাজারের টেকনাফের প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন অগ্নিকাণ্ডে তিনটি ইকো রিসোর্ট পুড়ে প্রায় ৬ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। রিসোর্ট মালিকদের বরাত দিয়ে প্রাথমিকভাবে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে পুলিশ।

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সকালে সেন্টমার্টিন পুলিশ ফাঁড়ির কর্মকর্তা অজিত কুমার দাস এ বিষয়ে কালবেলাকে বলেন, সেন্টমার্টিনে সাইরী রিসোর্ট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এতে পাশের আরও দুটি রিসোর্ট আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এতে গলাচিপার বিচ ভ্যালি এবং কিংশুক রিসোর্টের অধিকাংশ পুড়ে গেছে। আমরা ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেছি। এ সব রিসোর্টগুলো খুব সুন্দর এবং উন্নতমানের ছিল।

তিনি আরও বলেন, রিসোর্ট মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, প্রাথমিকভাবে প্রায় ৬ কোটি টাকায় ক্ষতি হয়েছে। শাইরি রিসোর্ট থেকে প্রথমে আগুনের সূত্রপাত হওয়ার বিষয়টি জেনেছি। তবুও আমরা ঘটনাটি গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখছি। এ ছাড়া পুড়ে যাওয়া রিসোর্টে পর্যটকদের অন্য হোটেলে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। মধ্যরাতে দ্বীপের পশ্চিম সৈকতের গলাচিপা এলাকায় এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শাইরি, বিচ ভ্যালি ও কিংশুক রিসোর্ট পুড়ে যায়।

পুড়ে যাওয়া কিংশুক রিসোর্টের সহকারী পরিচালক সাইফুদ্দিন বাবর বলেন, হঠাৎ করে রাতে আগুন দেখতে পাই। সঙ্গে সঙ্গে আমরা হোটেলে থাকা পর্যটকদের নিরাপদে সরিয়ে নেই। ততক্ষণে আমাদের রিসোর্টের ১৫টি কক্ষ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। কাঠ-বাঁশ এবং ছাউনি দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল আমাদের রিসোর্টটি। তাই দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেড় কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। তা ছাড়া আমাদের ব্যবসা লোকসানে পড়েছে।

রিসোর্ট বিচ ভ্যালির মালিক মো. সরোয়ার কামাল বলেন, আগুন আমাদের নিঃস্ব করে দিয়েছে। পুরো রিসোর্টটি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কোনো মালামাল রক্ষা করতে পারিনি। আমাদের ৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এখন আমরা কী করব?

সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান কালবেলাকে জানান, দ্বীপে বিভিন্ন কারণে ব্যবসায়ীরা খুব বিপদে রয়েছেন। তার ওপর আগুনের ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। সরকারের উচিত ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়ানো। তিনি দ্রুত সেন্টমার্টিন দ্বীপে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপনের দাবি জানান।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, আমাদের একটা টিম সেখানে পৌঁছেছে। আগুনের ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হবে। আর ক্ষতিগ্রস্তদের কীভাবে সহায়তায় করা যায়, এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, ঘটনা তদন্তে টেকনাফের ইউএনওকে প্রধান করে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ ও সুপারিশমালা প্রণয়নে দুদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে কমিটিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথা জানান জেলা প্রশাসক।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *