কেন এতটা ভয়াবহ হয়ে উঠলো লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানল

আন্তর্জাতিক


কেন এতটা ভয়াবহ হয়ে উঠলো লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানল

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ দাবানল চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে ছড়ানো দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি তিন দিনেও, উল্টো ঝড়ের বেগে বাতাসে তা ছড়িয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকায়। পুড়েছে শত শত ঘরবাড়ি, প্রাণ গেছে অন্তত সাতজনের। ভয়াবহ এই দুর্যোগ মোকাবিলায় রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে লস অ্যাঞ্জেলেস কর্তৃপক্ষ। প্রতিবেশী কাউন্টিগুলো থেকেও আনা হচ্ছে আগুন নেভানোর সরঞ্জাম ও কর্মী বাহিনী। এরপরও বাগে আসছে না আগুন। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, কেন এই দাবানল এতটা ভয়াবহ হয়ে উঠলো ও কেন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলো? দেশটির কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএস বলছে, দীর্ঘ সময় বৃষ্টি না হওয়ায় ফলে খরা আর প্রবল বাতাসের কারণে দাবানলটি এত দ্রুত ছড়াচ্ছে। তবে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি লিখেছে, দাবানল এমন ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনকেও কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। যদিও ঠিক কোন কোন বিষয় এর জন্য দায়ী, সেটি এখনো স্পষ্ট না।
ক্যালিফোর্নিয়া ফায়ার সার্ভিসের একটি ব্যাটালিয়নের প্রধান ডেভিভ অ্যাকুনার মতে, ক্যালিফোর্নিয়া এলাকার ৯৫ শতাংশ দাবানলের শুরুটা হয় মানুষের কারণেই। যদিও এখনকার দাবানলের শুরুটা কীভাবে হয়েছিল, তা স্পষ্ট করেননি সরকারি কর্মকর্তারা।
সান্তা আনা বাতাস
দাবানলের শিখা ছড়িয়ে পড়ার কারণ হিসেবে ক্যালিফোর্নিয়ার ‘সান্তা আনা বাতাসের’ কথা বলা হচ্ছে। মরুভূমির পরিবেশ বা শুষ্ক অঞ্চল থেকে ঘণ্টায় ৯৭ কিলোমিটার গতিতে এই বাতাস বয়ে যায় উপকূলের দিকে। এ বাতাসকে দাবানল ছড়িয়ে পড়ার বড় কারণ হিসেবেও দেখা হচ্ছে।
সিবিএস লিখেছে, সান্তা আনার এই বাতাসই লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানল উসকে দিচ্ছে, যা শত শত বাড়িঘর পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছে। গৃহহীন করে দিয়েছে লাখো মানুষকে। শুষ্ক আর উষ্ণ সান্তা আনা বাতাস বেশ শক্তিশালী। যুক্তরাষ্ট্রের নেভাডা, উটাহ ও ক্যালিফোর্নিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের শুকনো এলাকা থেকে এটি উড়ে আসে।
সান্তা আনার বায়ু স্বাভাবিকভাবেই উষ্ণ। কারণ সেটি ‘গ্রেট বেসিনে’ মরুভূমি মতো পরিবেশে সৃষ্টি হয়। ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির পরিবেশ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অ্যালেক্স হল বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন কীভাবে সান্তা আনা বাতাসকে প্রভাবিত করছে, সে বিষয়ে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত নন। তবে উষ্ণ তাপমাত্রা আগুনের আকার বাড়িয়ে দেয়।
এদিকে, খরা ও প্রবল বাতাস দাবানল উসকে দিলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনও এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের বড় একটি কারণ। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি গবেষণায় দেখা গেছে, দেশটির পশ্চিমাঞ্চলে বড় দাবানলের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের সম্পর্ক রয়েছে।
ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বলছে, জলবায়ু পরিবর্তন যেমন অতিরিক্ত তাপ, খরা, উষ্ণ বায়ুম-ল যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলে বড় ধরনের দাবানলের মূল কারণগুলোর একটি। আর উষ্ণ গ্রীষ্ম ও বৃষ্টির অভাবে খরার কারণে বিশেষত ক্যালিফোর্নিয়ার অবস্থা শোচনীয়। দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় দাবানলের সময় ধরা হয়ে থাকে সাধারণত মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত। তবে এ অঙ্গরাজ্যের গভর্নর গ্যাভিন নিউজম এর আগে বলেন, দাবানল আমাদের জন্য বহুবর্ষজীবী বা দীর্ঘ সময়ের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর কোনো মৌসুম নেই।
সূত্র: সিবিএস, বিবিসি


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *