কোম্পানির কর্মচারীদের সুবিধা বাড়াতে চাইলে এখন থেকে জ্বালানি বিভাগের অনুমোদন নেওয়ার বাধ্যবাধকতার শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। জ্বালানি বিভাগের অধীন বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজসম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) এবং পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কোম্পানিগুলোর জন্য এমন শর্তারোপ করে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
সরকারের জারি করা এই নির্দেশনায় কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা খানিকটা ক্ষুব্ধ হলেও প্রকাশ্যে কিছু বলতে সাহস করছে না। কেউ কেউ নাম প্রকাশে বিরত থেকে জানিয়েছেন, এই প্রক্রিয়া তাদের তোষণ করার জন্যই করা হচ্ছে। তাদের অভিযোগ, আমলারা অন্তর্বর্তী সরকারকে ভুল বুঝিয়ে তাদের প্রাপ্ত সুবিধা কমানোর জন্যই এসব করছেন।
বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি উভয় খাতে সরকার উৎপাদন, উত্তোলন, সঞ্চালন, বিতরণ খাতে কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে বাণিজ্য সম্প্রসারণ করেছে। বিশেষ করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের অর্ধেক এবং সঞ্চালন ও বিতরণের পুরোটাই রয়েছে সরকারের হাতে।
অন্যদিকে, গ্যাস অনুসন্ধান এবং উত্তোলনের আংশিক রয়েছে সরকারের হাতে। তবে গ্যাস সঞ্চালন এবং বিতরণ করে সরকারি কোম্পানি। এর বাইরে এখন এলএনজি আমদানি এবং সরবরাহ করে থাকে সরকারি কোম্পানি।
সরকার উৎপাদন পর্যায়ে ভতুর্কি দিলেও বিতরণ এবং সঞ্চালনে কোনও ভর্তুকি নেই। ফলে প্রত্যেকটি কোম্পানি বিপুল পরিমাণ মুনাফা করছে। কোম্পানি আইন অনুযায়ী এসব মুনাফা বণ্টন করা হচ্ছে। এতে কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বছরে বেতন-ভাতার চাইতে বেশি অর্থ প্রফিট বোনাস হিসেবে পাচ্ছেন। প্রফিট বোনাস বণ্টনে একেবারে নিচু স্তরের কর্মী যা পান প্রতিষ্ঠান প্রধানও ঠিক তাই পান। সম্প্রতি এই বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে। কোনও কোনও কোম্পানি প্রফিট বোনাস দেওয়ার বিপক্ষে। তবে কোম্পানি আইন অনুযায়ী প্রফিট বোনাস কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রাপ্য।
সূত্র বলছে, কোম্পানি আইন অনুযায়ী এর পরিচালনার দায়িত্ব থাকে কোম্পানি বোর্ড বা পরিচালনা পর্ষদের হাতে। সরকারের নিজস্ব কোম্পানি হিসেবে এই বোর্ড আবার সরকার নিজেই গঠন করে দেয়। তবে সরকার সরাসরি কোম্পানি পরিচালনায় কোনও হস্তক্ষেপ করে না।
বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি বিভাগের সবগুলো কোম্পানিই বিপুল মুনাফা করছে। সরকার অবশ্য এই মুনাফার ৪৫ ভাগ রাজস্ব হিসেবে রাজকোষাগারে জমা নিয়ে থাকে। এর বাইরে ভ্যাট এবং ট্যাক্স হিসেবে তাদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা হয়ে থাকে।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি জ্বালানি বিভাগ থেকে জারি করা এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘পেট্রোবাংলা/বিপিসির আওতাধীন কোনও কোম্পানির কর্মকর্তা/কর্মচারীদের জন্য বিদ্যমান, নতুন যেকোনও প্রকৃতির আর্থিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির প্রস্তাব থাকলে তা পেট্রোবাংলা/বিপিসির মাধ্যমে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করতে হবে।‘
জ্বালানি বিভাগের উপসচিব মো. আহসান উদ্দিন মুরাদ স্বাক্ষরিত ওই আদেশটি প্রত্যেক কোম্পানিকে মেনে চলতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইল তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহনেওয়াজ পারভেজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা যেসব সুবিধা নিতাম তা কোম্পানির বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে হতো। সেখানেও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা থাকেন। ফলে বিষয়টি প্রথম থেকেই নজরদারিতে ছিল। এখন নতুন করে এই নির্দেশনার ফলে আমাদের যেকোনও সুবিধা যেমন হোম লোন, কার লোন ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে পেট্রোবাংলার মাধ্যমে জ্বালানি বিভাগের অনুমতি নেওয়া লাগবে। আমরা সেই প্রক্রিয়ায় কাজ করবো এখন থেকে।